বিজয়নগরে ফসলি জমি ও পুকুর ভরাটে প্রশাসনের নীরবতা, ইউএনও বললেন ‘কিছু করার নেই’

সারাদেশ

দেলোয়ার হোসাইন মাহদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় গত এক বছরে অবৈধভাবে বালু ও মাটি ফেলে ফসলি জমি ও পুকুর ভরাট করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাধনা ত্রিপুরা বলেছেন, ব্যক্তিগত জমি হলে সেখানে ভরাটে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই, যা বিদ্যমান পরিবেশ ও জলাধার সংরক্ষণ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রাতদিন অবাধে চলছে জমি ও পুকুর ভরাটের কাজ। উপজেলার মির্জাপুর মোড়ে, যা উপজেলা পরিষদ থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে, চার দশকের পুরনো একটি পুকুর সম্পূর্ণভাবে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। অথচ প্রশাসন ছিল নীরব।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রতিদিন এই ভরাটকৃত পুকুরের পাশ দিয়ে যাতায়াত করলেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নেননি।

পুকুর ভরাটে জড়িত কয়েকজন জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করেই তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ইছাপুরা ইউনিয়নের মির্জাপুর, আম্বালা ফাউন্ডেশন এলাকা, চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক, পাহাড়পুরের আউলিয়া বাজার, পত্তনের লক্ষীপুর, টানমনিপুর, চরইসলামপুর, সাটিরপাড়া, কালীবাজার, মনিপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বালু ও মাটি ফেলে একের পর এক পুকুর ও আবাদি জমি ভরাট করা হয়েছে।

সোনাই নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে বিক্রিও করা হচ্ছে, যা পরিবেশগত ভারসাম্যকে আরও হুমকিতে ফেলছে।

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০১০ অনুযায়ী, জলাশয় বা ফসলি জমি ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব অপরাধের জন্য রয়েছে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানার বিধান। কিন্তু বিজয়নগরে এসব আইনের কোনো প্রয়োগ নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাজিম হোসেন শেখ বলেন, “পুকুর ভরাট আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। ব্যক্তিগত জমিতেও এ ধরনের কাজের বিরুদ্ধে নির্দেশনা রয়েছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাধনা ত্রিপুরা বলেন, “ব্যক্তির জমি ভরাটে আমাদের কিছু করার নেই। বাড়ি নির্মাণের জন্য কেউ জমি ভরাট করলে আইনগত কোনো সমস্যা হয় না।”

তাঁর এই বক্তব্য সংশ্লিষ্ট পরিবেশ আইন ও জলাধার সংরক্ষণ আইনের সম্পূর্ণ বিপরীত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইউএনও’র এমন মন্তব্য ভরাটকারীদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জায়মন জাহান জানান, “পুকুর ভরাটের কারণে মাছ চাষ হুমকিতে পড়ছে। উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মো. ওয়াসি আজাদ বলেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণে জলাশয় থাকা জরুরি। পুকুর না থাকলে বড় অগ্নিকাণ্ডের সময় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।”

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, ফসলি জমি ভরাটের ফলে মাটির জৈব গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে, কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *