তারিক লিটু, কয়রা (খুলনা): খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের তেঁতুলতলা গ্রামে সৌদি প্রবাসী পরিবারের ওপর চাঁদার দাবিতে ভয়াবহ হামলার অভিযোগ উঠেছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. সোহেল সরদার ও তার আপন ভাই জিয়া প্রজন্ম দলের খুলনা মহানগরীর সাবেক নেতা মো. সাইফুল্লাহর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের মারধর ও নারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। আহতদের মধ্যে একজনের হাত ভেঙে গেছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সোমবার দুপুরে গ্রামে কয়েক শত মানুষ মানববন্ধন করে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। মানববন্ধনে স্থানীয় নারী-পুরুষের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন। তারা বলেন, এ দুই ভাই দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের ৭ জন প্রবাসীর কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে আসছে। টাকা না দিলে হুমকি-ধমকি থেকে শুরু করে হামলাও করছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, সৌদি প্রবাসী মো. সোহরাব হোসেনের কাছে সম্প্রতি মোটরসাইকেল কেনার জন্য চাঁদা দাবি করে সাইফুল্লাহ। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় প্রবাসীর ছোট ভাই এবাদুল হোসেনকে মারধর করে হাত ভেঙে দেয় সোহেল ও তার ভাই সাইফুল্লাহ। এ সময় সোহরাব হোসেনের স্ত্রী মাহফুজা খাতুনসহ পরিবারের নারীদের ওপরও হামলা চালানো হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সোহেল সরদার ও সাইফুল্লাহ একসময় ভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয় ব্যবহার করলেও এখন তারা খুলনা মহানগর বিএনপির নাম ভাঙিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে। তারা সৌদি প্রবাসীদের পরিবারকে লক্ষ্য করে নিয়মিত চাঁদা দাবি করছে। শুধু গত মাসেই অন্তত সাতটি প্রবাসী পরিবার থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গ্রামবাসী জানান, প্রবাসীরা দেশে এলে তাদের কাছ থেকে টাকা দাবি করা হয়। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। শুধু এবাদুল নয়, এর আগে প্রবাসী ইসমাইলকে খুলনার নিরালায় আটকে রেখে ৭০ হাজার টাকা আদায় করেছিলেন সোহেল।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া স্থানীয় আব্দুল হাই সরদার বলেন, “আগে তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির নামে মানুষকে জিম্মি করত। এখন যুবদলের নাম ব্যবহার করছে। সাতজন সৌদি প্রবাসীর কাছ থেকে টাকা দাবি করেছে। না দিলে হামলা করেছে।”
মোস্তাফা সরদার বলেন, “প্রবাসীরা দেশে ফিরে শান্তিতে থাকতে পারে না। তাদের কাছে কখনো মোটরসাইকেল, কখনো গাড়ির জন্য টাকা দাবি করে। না দিলে মারধর করে। এবাদুলের হাত ভাঙা তারই প্রমাণ।”
অভিযুক্তদের আপন চাচা আবু হানিফ বলেন, “তারা আমার ভাতিজা। কিন্তু এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়। ছেলেদের মারধর করে, প্রবাসীদের কাছে চাঁদা দাবি করে। আমি তাদের শাস্তি চাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে গ্রামের মানুষ নিরাপদ থাকবে না।”
আহত প্রবাসীর স্ত্রী মাহফুজা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “চাঁদার টাকা চাইতে আমাদের বাড়িতে আসে। গালিগালাজ করে, হুমকি দেয়। আমরা ভয়ে কিছু বলতেও পারি না। এবার হাত ভেঙেছে, কাল হয়তো আরও বড় কিছু করবে।”
একই গ্রামের আজিজুল হক বলেন, “তাদের ভয়ে গ্রামের মানুষ শান্তিতে বসতে পারছে না। প্রবাসীরা বাড়ি এলেই তারা টার্গেট করে। জোর করে টাকা নেয়। এইভাবে আর কতদিন চলবে?”
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গ্রামের মানুষ এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সোহেল ও সাইফুল্লাহর বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। তারা দ্রুত এই দুই ভাইকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এবিষয়ে অভিযুক্ত মো.সাইফুল্লাহ বলেন, তাদের কাছে টাকা একজন পাবেন, আমি এক বড় ভাইয়ের অনুরোধে ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করে দিয়েছি। আমার পরিবারের সাথে বিরোধ থাকায় তারা মিথ্যা অভিযোগ করছে।মারধরের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মারামারি হয়েছে তবে তারা আমাদের দুই ভাই ও বাবাকে মারধর করেছে।
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, সোহেল ও সাইফুল্লাহর দৌরাত্ম্যে তেঁতুলতলা গ্রামে স্থায়ী অশান্তি বিরাজ করছে। তারা প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে প্রবাসী পরিবারগুলোকে হয়রানি করছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে প্রবাসীদের জন্য গ্রামে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।