পাবলিক বাসে ড্রাইভারের বাধাহীন ধূমপান, অতিষ্ঠ যাত্রীরা

অপরাধ

মোসাঃ তানজিলা: রাজধানী ঢাকার জনবহুল জীবনে প্রতিদিন লাখো মানুষ নির্ভর করেন পাবলিক বাসে চলাচলের ওপর। কিন্তু এই বাসগুলোতে যাত্রীদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে আরেকটি বড় সমস্যা—ড্রাইভার ও হেল্পারদের বাধাহীন ধূমপান। অনেক সময় দেখা যায়, তীব্র গরমের মধ্যেও ড্রাইভার গাড়ি চালাতে চালাতেই সিগারেট ধরাচ্ছেন। এতে যাত্রীরা পড়ছেন তীব্র অস্বস্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর ১১ নম্বর আইনের ৭(১) ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণে ধূমপান নিষিদ্ধ। এ আইন লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে, আর পুনঃপুন অপরাধের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ দ্বিগুণ হবে।

তবে বাস্তবে এই আইন কার্যকর হতে দেখা যায় না। অধিকাংশ পাবলিক বাসে ধূমপানের ধোঁয়া ছড়িয়ে থাকে, যাত্রীরা বাধ্য হন সেই দুর্গন্ধময় ও ক্ষতিকর ধোঁয়া সহ্য করতে।

বাসের সামনের সিটগুলোতে বসেন বেশিরভাগ মহিলা ও শিশু। তাদের জন্য এই ধোঁয়া একপ্রকার অসহনীয় হয়ে ওঠে। যাত্রীদের কেউ কেউ জানান, ধূমপান বন্ধ করতে বললে ড্রাইভাররা খারাপ আচরণ করেন, এমনকি বাসে উঠতেও না করেন। এক ভুক্তভোগী বলেন—

“ড্রাইভারকে ধূমপান না করতে বললে উল্টো তিনি বাজে কথা বলেন। ট্রাফিক পুলিশকে জানালেও তেমন ব্যবস্থা নিতে দেখি না। ড্রাইভাররা বলে—‘ওরাও তো খায়!’ অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও দায়ী করে বসেন।”
বাসে চলফেরা করা নিয়ে ফাতেমা রহমান স্নিগ্ধা বলেন, আমি সিগারেট এর গন্ধ সহ্য করতে পারি না কিন্তু লোকাল বাসে এটি নিতান্তই একটি স্বাভাবিক ব্যাপার তাই এখন প্রয়োজন ব্যতীত লোকাল বাসে উঠি না।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক প্রতিনিধি বলেন— “আমরা বহুবার ড্রাইভারদের ধূমপান না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। বাসে ‘ধূমপান নিষিদ্ধ’ স্টিকারও লাগানো হয়। তবুও থামানো যাচ্ছে না।আমরা এটি বন্ধে চেষ্টা করছি।” 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান— “পাবলিক বাসে ধূমপান আইনত নিষিদ্ধ। যাত্রীরা আমাদেরকে জানালে আমরা ড্রাইভারদের সতর্ক করি।সবাইকে অনুরোধ করব—এমন ঘটনা দেখলে আমাদের হেল্পলাইনে জানাতে। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।”

সিগারেট ধোঁয়ার মাধ্যমে শুধু সেবনকারী নয়, চারপাশের মানুষও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ড্রাইভার ও হেল্পারদের এই অভ্যাস যাত্রীদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। এখনই সময় প্রশাসনকে আরও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা, নিয়মিত মনিটরিং ও জরিমানার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। একইসাথে পরিবহন মালিকদের উচিত ড্রাইভারদের সচেতন করা ও বাসে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *