অনলাইন ডেস্ক: বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশেই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মদিনকে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ হিসেবে পালন করা হয়। তবে আলেমদের একটি বড় অংশ এই দিবস উদযাপনের বিরোধিতা করেন। তাদের মতে, ১২ রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা সুন্নতের পরিপন্থী এবং এটি একটি ‘বিদআত’। তাদের যুক্তি হলো, রাসূল (সা.) নিজে কখনো নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করে তাঁর জন্মদিন পালন করেননি। বরং তিনি তাঁর জন্মদিনের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন। সাহাবিদের জীবনেও ১২ রবিউল আউয়াল উপলক্ষে মিলাদ পালনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
শরিয়তের দৃষ্টিকোণ ও ঈদের ধারণা
ইসলামি শরিয়তে কোনো ইবাদত গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য সুস্পষ্ট দলিল প্রয়োজন। আলেমরা মনে করেন, ‘ঈদ’ ইসলামের একটি প্রতীকী বিষয়, যা সম্পূর্ণরূপে শরিয়তের নির্দেশনা দ্বারা নির্ধারিত। মানুষ নিজের বিচার-বিবেচনা দিয়ে কোনো ঈদ উদ্ভাবন করতে পারে না। শরিয়ত অনুসারে মুসলিমদের জন্য শুধুমাত্র দুটি ঈদ রয়েছে—ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। এই দু’টি ঈদের বাইরে নবীজির জন্মদিনকে ‘তৃতীয় ঈদ’ হিসেবে পালন করাকে তারা ‘বিদআত’ বলে মনে করেন।
যারা ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করেন, তারা মূলত নবীজির প্রতি ভালোবাসা থেকেই তা করেন। তবে আলেমদের মতে, রাসূল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার সঠিক পথ হলো তাঁর সুন্নত অনুসরণ করা, তাঁর আদর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করা এবং সমাজে সুন্নতকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা করা। যে ইবাদত সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়, তাকে বিদআত বলা হয়। তাই ১২ রবিউল আউয়ালকে ঈদ হিসেবে পালন করা সরাসরি সুন্নতের পরিপন্থী।
জন্মতারিখ নিয়ে মতভেদ
ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের আরেকটি বড় বিতর্কিত দিক হলো ১২ রবিউল আউয়াল তারিখের সঠিকতা। রাসূল (সা.)-এর যুগে জন্মতারিখ লিপিবদ্ধ করে রাখার প্রথা না থাকায় তাঁর প্রকৃত জন্মতারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিসের মতে, রাসূল (সা.)-এর জন্ম ৮ অথবা ৯ রবিউল আউয়াল তারিখে হয়েছিল।
- ৮ রবিউল আউয়াল: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), জুবাইর ইবনে মুতঈম (রা.) এবং বেশিরভাগ মুহাদ্দিস এই তারিখের ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন।
- ৯ রবিউল আউয়াল: ঐতিহাসিক মুহাম্মদ সুলাইমান মানসুরপুরী এবং মাহমুদ পাশার অনুসন্ধানে এই তারিখটি উঠে এসেছে। প্রসিদ্ধ সিরাত গ্রন্থ ‘আর রাহিকুল মাখতুম’-এও ৯ রবিউল আউয়ালের কথা উল্লেখ আছে।
- ১২ রবিউল আউয়াল: যদিও এই তারিখটি সর্বাধিক প্রচলিত, কিন্তু এটি নবীজির প্রকৃত জন্মদিন হিসেবে নির্ভরযোগ্যভাবে প্রমাণিত নয়।
আলেমদের মতে, যদি ১২ রবিউল আউয়াল তারিখটি প্রমাণিতও হতো, তবুও জন্মদিন উপলক্ষে উৎসব বা ভোজনরসিকতা করা সুন্নত পরিপন্থী কাজ। রাসূল (সা.) নিজেই তাঁর জন্মদিন পালনের সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি শিখিয়ে গেছেন। হজরত আবু কাতাদাহ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) সোমবার রোজা রাখা সম্পর্কে বলেন, “ওই দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, ওই দিনই আমি নবুয়ত লাভ করেছি এবং আমার ওপর ওহি অবতীর্ণ হয়।” এই হাদিসটি মুসলিম শরিফে উল্লেখিত আছে।
আলেমরা মুসলিম উম্মাহকে বিদআত থেকে বেঁচে থাকার এবং রাসূল (সা.)-এর প্রকৃত সুন্নাহ অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।