মো: আব্দুর রাজ্জাক, বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ পেয়েছে। এতে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরাসরি ‘ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সনদে যুক্ত হয়েছে বিগত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্বীকৃতি।
নতুন সংযোজন ও সংশোধন:
জুলাই গণঅভ্যুত্থান: আগের ভাষ্যে নিহতের সংখ্যা ছিল “প্রায় এক হাজার”, সংশোধিত খসড়ায় তা পরিবর্তন করে লেখা হয়েছে “সহস্রাধিক”।
১/১১ প্রেক্ষাপট: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে লগি-বৈঠার তাণ্ডব ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থা ও অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয় স্পষ্টভাবে যুক্ত করা হয়েছে।
১৯৭৫–১৯৭৯ ইতিহাস: পঁচাত্তরে বাকশালের মাধ্যমে একদলীয় শাসন এবং জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের উদ্যোগের কথা নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে।
নোট অব ডিসেন্ট: চূড়ান্ত অঙ্গীকারনামায় নতুন করে একটি ধারা যোগ করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে— কোনো রাজনৈতিক দল যদি সনদের নির্দিষ্ট অংশে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেয়, তবে ক্ষমতায় গেলে তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে।
চারটি প্রস্তাব বাদ: আগের খসড়ায় ৮৪টি প্রস্তাব ছিল, তবে সংশোধিত খসড়ায় তা কমিয়ে ৮০ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন নিয়োগের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বাকি চারটি প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীন পুলিশ কমিশন: সংলাপের ভিত্তিতে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া এবার স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিশনে ৯ সদস্য থাকবেন, যার মধ্যে দুজন নারী রাখা বাধ্যতামূলক। চেয়ারম্যান হবেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং সদস্য সচিব হবেন পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি পর্যায়ের কর্মকর্তা।
কমিশনের প্রতিক্রিয়া: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, “দলগুলোর মতামত ও পরামর্শ আমরা প্রতিফলিত করেছি। যেসব ত্রুটি ছিল, সেগুলো সংশোধন করে সনদকে আরও গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে।”
চূড়ান্ত জুলাই সনদে প্রথমবারের মতো শেখ হাসিনাকে নাম উল্লেখ করে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলা হয়েছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একইসঙ্গে জনগণের ম্যান্ডেট পেলে ভিন্নমত দেওয়া দলগুলো সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে—এটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।