কাটিমন আমেই আলামিনের এনে দেয় সফলতা

অর্থনীতি

রাকিবুল হোসেন শাহীন, রাজশাহী: আলামিনের বয়স চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। আমের রাজ্য হিসাবে পরিচিতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে শ্যামপুর ইউপির বাবুনগর গ্রামের কৃষক ওয়াজেদ বড় ছেলে তিনি। নিজের জায়গা জমি খুব একটা নেই। তার বাবা ওয়াজেদ আলী নিজের গ্রামে অল্প পরিসরে অন্যের জমি লিজ নিয়ে আম বাগান করতেন। সেই ১৫ বছর আগের কথা। সে সময় আলামিন বাবার সাথে আম বাগানে পরিচর্যা করতেন।

সেই পরিচর্যা থেকে আলামিনের আমের প্রতি ভাল লাগা। ভাল লাগা থেকে এখন তিনি একজন ভাল মানের আম চাষী। তিনি নতুন নতুন জাতে আম চাষ শুরু করেছেন। এখন তিনি আর নিজ গ্রামে নয় তার আম বাগানের পরিধি বেড়ে চলে এসেছে বরেন্দ্র অঞ্চলে। আলামিন জানান,মৌসুমের আম চাষ করে আমি ১৫ বছর বাবা ১০ বছরে সেভাবে সফল হতে পারেনি। কিন্ত বারোমাসী কার্টিমন আম চাষ করে মাত্র চার বছরে বড় সফলতা এনে দিয়েছে তাকে।

বারোমাসি কাটিমন আম চাষ করে কৃষক আলামিন বছরে কোটি টাকা আয় করছেন। অসময়ের এ সুস্বাদু আম প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছেন তিনি।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা ও গোদাগাড়ীর কাঁকনহাটে দুইটি বাগানে তার প্রায় ৬ হাজার কাটিমন আম গাছে ঝুলছে।এসব গাছ হতে এবার এক হাজার ৩০০ শত মন আম পাওয়া আশা করছেন তিনি। বর্তমানে প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় দরে। আলামিনের বারোমাসি কাটিমন আম চাষে এমন সফলতা দেখে অন্য কৃষকেরা বোরোমাসি কাটিমন আম বাগানে ঝুকতে শুরু করেছেন। কৃষক আলামি শুনালো তার সফলতার গল্প।

আলামিন বলেন,গোপাল ভোগ ন্যাংড়া,আম্মপালি বারি-ফোর খিরসা ব্যানানা গৌরমতি ফজলি আসীনাসহ প্রায় ২২ রকম আম ধরে তার বাগানে। আম একটি সুস্বাদু মৌসুমী ফল। মৌসুমী ফলের মধ্যে সবার সেরা পছন্দের তালিকায় থাকে সুস্বাদু আম। মৌসুমের আম এক সঙ্গে পাক ধরে তাই এর দাম নাগালের মধ্যে থাকে ক্রেতাদের।

দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাকে কিন্ত চাষীরা উৎপাদন খরচ তুলতে পারেনা।তাদের লীজকৃত জমিতে আম বাগার করে কৃষি শ্রমিকসহ অন্য খরচ অনেক বেশি পড়ে। তাই তিনি গত চার বছর আগে বারোমাসি কাটিমন জাতের আমের দিকে ঝুকতে শুরু করেন। আর তাতে সফলতা দেখা পান তিনি। আলামিন বলেন,মুন্ডুমালা আইড়া মোড়ে প্রায় ৩৮ বিঘা ও কাকনহাটে ৪৪ বিঘা জমির উপরে থাকা আম বাগান দুইটি তিন বছরের জন্য লীজ নেন। পাঁচ মিশালী বাগানে আম মৌসুমে আম বেচে খরচ উঠেনা। তাতে তার লোকসান হতে থাকে।

এমন সময় তার বারোমাসি কাটিমন আম চাষ করা আগ্রহ জাগে। এর পরে দুই বাগানে প্রায় ৬ হাজার কাটিমন আম গাছ লাগান। গাছ লাগানোর এক বছরের মাথায় আম ধরতে শুরু করে। এ কাটিমন আম অসময়ে ধরাই বাজারে দাম যাওয়া যায় বেশি। আলামি বলেন কাটি মন আম বছরে তিন বার ধরলেও আমরা দুই বার নিই। আর আমের ভরা মৌসুমে কাটিমন আমের ফুল ভেঙ্গে দেয়া হয়। কারণ বছরে দুই বার অসময়ে এ আম পেলে দাম ভাল ও ফলন বেশি পাওয়া যায়।

তিনি আরো বলেন,কাটিমন আমের ভরা মৌসুম চলছে। আগষ্ঠ ও সেপ্টেম্বর দুই মাস ও ফ্রেবয়ারী ও মার্চ মাসে একবার পাওয়া যাবে। তবে সব চেয়ে ফ্রেবয়ারী মাসে কার্টিমন আমে দাম বেশি থাকে। সে সময় অন্য জাতের আম গাছে মুকুল আসতে শুরু করে। সে সময় এ পাকা কাটিমন আম আমরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে পারি। প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি বিক্রি হয়ে থাকে।
তিনি বলেন,আম ছোট থাকতেই আমে প্যাকেট পরানো হয়। প্যাকে পরানোর কারণে পোকার আক্রমণ করতে পারেনা। এবং রং ভাল থাকে। কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়না। আলামি বলেন,এ কাটিমন আম অসময়ে দুইবার বিক্রি করলে খরচ বাদে তার আয় থাকে ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *