বিশেষ প্রতিনিধি: সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে সবজির ক্ষেত ডুবে গেছে, যার ফলে বাজারে সবজির সরবরাহ কমেছে এবং দাম বেড়েছে। এর সরাসরি প্রভাবে ডিমের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও বেড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে লোকসানে থাকা ডিমের খামারিরা এই মূল্যবৃদ্ধিতে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন।
টাঙ্গাইলের সখিপুরের ১৫ বছরের অভিজ্ঞ খামারি জাহিদুল ইসলাম (৩৮) জানান, গত ছয় মাস ধরে ডিমের দাম কম থাকায় তারা লোকসানে ছিলেন। তার ৮,৫০০ লেয়ার মুরগির খামারে উৎপাদিত প্রতিটি ডিম যখন ৭ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে, তখন ডিমপ্রতি প্রায় ২-২.৫ টাকা লোকসান হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাকে ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়েছে। এখন প্রতি ডিম ৯.৫ টাকা দরে বিক্রি করতে পারায় তিনি কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। তিনি মনে করেন, মাছ, মাংস ও সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ ডিম বেশি কিনছেন, যার ফলে দাম বেড়েছে।
মধুপুরের খামারি মজনু মিয়া (৩৩) জানান, টানা লোকসানের কারণে অনেক ছোট খামারি তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ফলে ডিমের উৎপাদন প্রায় ১৫-২০ শতাংশ কমে গেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিটি ডিমের ফার্মগেট মূল্য কমপক্ষে ১১ টাকা না হলে প্রান্তিক খামারিদের পক্ষে এই ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন।
সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, দেশে প্রতিদিন আনুমানিক ৪.৫ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়, কিন্তু চাহিদা প্রায় ৫ কোটি ডিমের। তবে গ্রামীণ পরিবারগুলোতে ডিম উৎপাদন হওয়ায় সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন।
বাংলাদেশ ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ডলারের উচ্চ মূল্য এবং খাদ্য উপকরণের বর্ধিত দামের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ডিমের বাজারে অস্থিরতা ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, যখন ডিমের দাম কমে যায়, তখন খামারিদের স্বার্থ নিয়ে কেউ কথা বলে না। অ্যাসোসিয়েশন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে উৎপাদন খরচের সঙ্গে ৩০ শতাংশ মুনাফা যোগ করে ডিমের সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ করেছে।