জনবল সংকটে জয়পুরহাটের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

স্বাস্থ্য

মোঃ মোকাররম হোসাইন,জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের সরকারি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এক সময় জেলার অন্যতম স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু নানা সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে বর্তমানে এটি প্রায় অচল অবস্থায় পৌঁছেছে। নেই ওষুধ, নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি, জনবলও চরম সংকটে। ফলে ধুঁকে ধুঁকে চলছে গুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালের কার্যক্রম।

জয়পুরহাটের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে এটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। রোগী, স্বজন এবং স্টাফদের একটাই দাবি, হাসপাতলটি যেন আবার আগের মত সচল ও কার্যকর হয়ে উঠে।

১৯৭৯ সালে জয়পুরহাট শহরের ধানমন্ডি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। স্থানীয়ভাবে এটি “মাতৃমঙ্গল হাসপাতাল” নামেও পরিচিত। এক সময় এখানে সিজারিয়াসহ নানা ধরনের অস্ত্রোপচার, রোগ নির্ণয়ের আধুনিক পরীক্ষা এবং ওষুধ সরবরাহের সুব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এখন এসব কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

৮ মাস ধরে নেই ওষুধ সরবরাহ
সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীরা প্রতিবারই ওষুধের পরিবর্তে কেবল প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে ফিরছেন। দরিদ্র রোগীদের জন্য এটি এক কঠিন বাস্তবতা।

বন্ধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কার্যক্রম
আলট্রাসনোগ্রাম, রক্ত পরীক্ষা কিংবা অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্ট করানোর মতো কোনো সুযোগ নেই। পরীক্ষার জন্য রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানো হচ্ছে।

অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ না থাকায় অপারেশন বন্ধ। গত দেড় বছর ধরে নেই কোনো অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ। ফলে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের অস্ত্রোপচার। শুধুমাত্র নরমাল ডেলিভারিই করা হচ্ছে।

জরাজীর্ণ ভবন, চরম ঝুঁকি হাসপাতাল ভবনের নানা জায়গায় ফাটল ধরেছে, পলেস্তারা খসে পড়ছে। ফলে রোগী ও স্টাফরা চরম ঝুঁকির মধ্যেই অবস্থান করছেন প্রতিদিন।

সবুজ নগরের রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চারবার চেকআপ করালাম, একবারও ওষুধ পেলাম না। মেশিন না থাকায় আলট্রাসনোগ্রাম কিংবা রক্ত পরীক্ষাও করাতে পারিনি। এই হাসপাতালের শুধু নাম আছে, কাজ নেই।

আমতলী এলাকার রিমা আক্তার বলেন,আগে এখানে ভালো সেবা পাওয়া যেত, ওষুধও মিলত। সিজার হতো, এখন কিছুই হয় না। সবকিছুই কিনে আনতে হয় বাইরে থেকে।

পাঁচবিবির লাভলী খাতুন জানান, মেয়ে ভর্তি আছে, কিন্তু ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে না। গরিব মানুষ, বাইরে থেকে ওষুধ কিনে খাওয়াতে হচ্ছে। ভবনের অবস্থাও খুবই খারাপ, কখন ধসে পড়ে কে জানে!

ক্ষেতলালের মিনহাজুল ইসলাম বলেন, মাতৃমঙ্গল হাসপাতাল এক সময় জয়পুরহাটের গর্ব ছিল। এখন সব কিছুই শেষ। কেউ গুরুত্ব দেয় না। যদি চালাতে না পারে, তাহলে বন্ধ করে দিক।

সিনিয়র স্টাফ নার্স চম্পা পারভিন বলেন, দীর্ঘদিন বেতন পাই না। ওষুধ নেই, পরীক্ষা-নিরীক্ষা নেই, চিকিৎসক সংকট ভয়াবহ। আগে প্রতিদিন রোগীর ভিড় থাকত, এখন রোগীই আসে না। কম স্টাফ থাকায় ডাবল ডিউটি করতে হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডা. শাহানা পারভীন বলেন, অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ না থাকায় দেড় বছর ধরে কোনো অপারেশন করতে পারছি না। জনবল সংকটে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ওষুধ সরবরাহও নেই। আমরা শুধু প্রেসক্রিপশন দিচ্ছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি নজর দেন, তাহলে হাসপাতালটি আগের অবস্থানে ফিরে আসতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *