মো: আব্দুর রহমান প্রামাণিক: বাংলা সাহিত্যের আকাশে কিছু নাম চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। তাদের মধ্যে অন্যতম সৈয়দ মুজতবা আলী। তিনি কেবল একজন সাহিত্যিকই নন, ছিলেন ভাষাবিদ, ভ্রমণপিপাসু, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক এবং এক কথায় বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। তাঁর সাহিত্যকর্ম পাঠকের মনে আনন্দ, কৌতূহল ও চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে যুগে যুগে।
১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেটের করিমগঞ্জে জন্ম নেওয়া এই প্রতিভাবান লেখক শৈশব থেকেই ছিলেন অধ্যবসায়ী ও জ্ঞানপিপাসু। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অধ্যয়ন ও বসবাস তাঁকে দিয়েছে বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা। আর সেই অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারই হয়ে উঠেছে তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির মূলধন। তাঁর “দেশে দেশে” কিংবা “পঞ্চতন্ত্র” পাঠককে আজও নতুন জগতে নিয়ে যায়।
সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো—ভাষার সহজ-সরল ব্যবহার এবং রসিক ভঙ্গি। তিনি জটিল বিষয়ের কথাও এমনভাবে বলতে পারতেন যে, পাঠক হাসতে হাসতেই গভীর সত্য উপলব্ধি করতেন। ব্যঙ্গ, কৌতুক, ব্যতিক্রমী চিন্তা ও প্রাণবন্ত বর্ণনার কারণে তিনি হয়ে উঠেছেন সর্বস্তরের পাঠকের প্রিয় লেখক।
তাঁর সাহিত্যকর্ম কেবল বিনোদন নয়, বরং সমাজ-সংস্কৃতি, ধর্ম, রাজনীতি এমনকি বিশ্বদৃষ্টির প্রতিফলনও। তিনি ছিলেন মানবতাবাদী এবং উদার মননের মানুষ। বহুভাষাজ্ঞ ও বিশ্বসাহিত্যের সাথে পরিচয়ের কারণে তাঁর চিন্তাভাবনায় ছিল এক বিশেষ বৈচিত্র্য।
আজকের প্রজন্মের জন্য সৈয়দ মুজতবা আলী শুধু এক সাহিত্যিক নন; তিনি এক দিশারি, যিনি আমাদের শিখিয়েছেন—ভাষা ও সাহিত্যের শক্তি দিয়ে কিভাবে সমাজকে বদলানো যায়, কিভাবে হাসির ভেতর দিয়ে গভীর বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়।
তাঁর জন্মদিনে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি এই মহামানবকে। নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের অঙ্গীকার—সৈয়দ মুজতবা আলীর সাহিত্য পাঠ ও চর্চার মধ্য দিয়ে আমরা গড়ে তুলব জ্ঞাননির্ভর, মননশীল এক প্রজন্ম।