বটিয়াঘাটায় জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে প্রেসক্লাবের অর্থ আত্বসাতের অভিযোগ

সারাদেশ

খুলনা প্রতিনিধি: খুলনা বটিয়াঘাটার সদর ইউনিয়নের জামায়াত সভাপতি ও বটিয়াঘাটা প্রেসক্লাবের যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুলের বিরুদ্ধে সরকারের দেয়া বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আত্বসাতকৃত অর্থ ফেরত সহ অভিযুক্ত তরিকুলের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নিতে গত মাসের (২২ সেপ্টেম্বর২০২৫) বর্তমান প্রেসক্লাবের আহবায়ক মো. সোহেল রানা বাদী হয়ে অত্র উপজেলার ইউএনও বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও’র) কার্যালয় থেকে প্রেসক্লাবের নামে সরকারি ভাবে ০২ বান টিন ও ০৬ (ছয় হাজার) টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় তবে প্রেসক্লাব শুধুমাত্র ০২ বান টিন গ্রহণের তথ্য প্রকাশ্যে আসে। বাকি ০৬ হাজার টাকা কাউকে কিছু না জানিয়ে তরিকুল নিজেকে প্রেসক্লাবের সভাপতি পরিচয় দিয়ে অভিনব কায়দায় সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে চলতি বছরের (২৯ শে জুন) উক্ত অফিস থেকে নিজের নামে চেক গ্রহণ করে নিজেই অর্থ উত্তোলন করে ব্যক্তিগতভাবে খরচ করেন। পরে খবরটি জানাজানি হলে সাংবাদিক মহলসহ স্বচ্ছ রাজনৈতিক সংগঠন (জামায়াত) সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করছেন অনেকেই। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগকারী মো. সোহেল রানা প্রেসক্লাবের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বলেন, প্রেসক্লাবের নামে টাকাটা তার সবার সাথে যোগাযোগ করে নেয়া উচিত ছিল। আমি যতদূর জানি টাকাটা প্রেসক্লাবে এখনো জমাও হয়নি। ইতিপূর্বে কোন তথ্য আমি সহ প্রেসক্লাবের কোন সদস্যকে কাউকে জানানো হয়নি। এটা নিয়ে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। প্রেসক্লাবের মিটিংয়ে সকলের মধ্যে আলোচনা করে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তাছাড়া প্রেসক্লাবের সাঃ সম্পাদক আলামিন গোলদার বলেন, সরকারিভাবে আমাদের প্রেসক্লাবের নামে টিন ও টাকা বরাদ্দ ছিল কিন্তু টাকাটা উনি (তরিকুল) তার ব্যক্তি নামে নিয়েছে। টাকাটা প্রেসক্লাবে এখনো পর্যন্ত জমা দেয়া হয়েছে এটা আমার জানা নেই।

সর্বশেষ এ ব্যাপারে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত তরিকুল ইসলাম আত্বসাতের চেক সম্পর্কে বলেন, চেক ছয়মাস পূর্বে ইস্যু হওয়ায় দেরিতে টাকা উত্তোলন হয়েছে। সবকিছু প্রেসক্লাবে জানানো হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে প্রেসক্লাবের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাপ হোসেন মুন্সীর কাছে টাকাটা আছে তিনিও আহ্বায়ক কে জানিয়েছেন। পরে সোহরাপ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, চেকের টাকা তরিকুলের কাছে নেই আর টাকা তরিকুল উঠাননি। আর চেকটি তরিকুলের নামে লেখার পর আমি আহ্বায়ক সোহেল ভাইকে জানিয়েছি। পরদিন টাকা উঠিয়ে সোহেল ভাইকে জানিয়েছি টাকা কি কবর? উনি বললেন, টাকাটা তোমার কাছে রাখো। তারপর তার ম্যাসেঞ্জারে পিঠিয়েছি। পরে সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ইউএনও’র কাছে অন্য কেউ অভিযোগ করেছে বলে রঙিন রূপবান সাদাকালো সিনেমা স্টাইলে তরিকুলের পাশে অবস্থান করেন তিনি।

এ ব্যাপারে সাবেক ঐ (পিআইও) শরীফ মো. রুবেল মুঠোফোনে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তরিকুল ভাই নিজেকে জামায়াত নেতা ও প্রেসক্লাবের সভাপতি পরিচয় দিয়ে চেকটি গ্রহণ করেছেন বলে জেনেছি। পরে তাকে বারবার বলা সত্বেও টাকা প্রেসক্লাবে ফেরত না দিয়ে নিজেই আত্বসাৎ করেছেন ঘটনাটি আসলেই ভীষণ দুঃখজনক।

অপরাধ প্রমাণিত হলে দলীয় ভাবে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কি’না এ ব্যাপারে খুলনা-০১ আসনে জামায়াতের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওঃ শেখ আবু ইউসুফ “এমন চাঞ্চল্যকর বিষয়টিকে নিজেদের আভ্যন্তরীণ একটা কোন্দল” বলে দাবি করেন।
প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে বটিয়াঘাটা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনেয়ারা তন্নী “নতুন পিআইও অফিস থেকে বিষয়টি নিয়ে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে মুঠোফোনে জানান”।

অনুসন্ধান বলছে, সাংবাদিকতায় অশিক্ষিত ও প্রেসক্লাবের অর্থ লোপাট সহ সরকারি অফিসের তদবির কান্ডে অভিযুক্ত তরিকুলের তেমন কোন বৈধ ইনকাম সোর্স ছিল না। নগদ অর্থ ও (জামায়াত) দলীয় নাম ব্যবহার করে জাতীয় দৈনিক সংগ্রাম সহ বেশ কয়েকটি কার্ড কিনে প্রতিদিন সকাল থেকে উপজেলার সরকারি অফিসগুলোতে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকেন অহেতুক ঘোরাঘুরি করে নিজেকে সর্বত্রই জামায়াতের বড় নেতা বলে সকলে জানান দিয়ে থাকেন। কখনো কখনো সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করে কৌশলে হাতিয়ে নেন টাকা। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতেও সাহস পায় না। সাংবাদিকেরা জাতির বিবেক তবে এমন সাংবাদিক জাতির জন্য অভিশাপ বলেও মন্তব্য করেন অনেকেই।

তাছাড়াও উপজেলার পাশাপাশ সকল ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ল্ড পর্যায়ে বিস্তার করে রেখেছে তার দালাল চক্রের সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট নিম্নাঞ্চল থেকে সহজ সরল মানুষকে টার্গেট করে সরকারি দপ্তরে নিয়ে এসে বানানো হয় বলির পাঁঠা। এভাবে সরকারি অফিসে আসা কাজের তদবির বানিজ্য করে সংসার নির্বাহ হয় তার। তবে তার হাতে সরকারি অফিসের টুকিটাকি দূর্ণীতির তথ্য আসে না এটা একেবারেই তা নয়। তিনি দূর্ণীতির তথ্য সংগ্রহ করেন ঠিকই কিন্তু সেগুলো প্রকাশ না করে হাঁটেন ব্লাকমেইলের পথে। আবার কোন সাংবাদকর্মী যদি দূর্ণীতিগ্রস্থ কোন কর্মকর্তা বা অফিসের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেন তখন তিনি অপরাধীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের দেয়া ২/১ হাজার হাদিয়া নিয়ে মূহুর্তেই সেই সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে কথিত অনলাইন পোর্টালে ভূয়া-কথিত বলে মনগড়া মন্তব্য অপপ্রচার করেন বলে জানায় একাধিক সাংবাদিককর্মী। সরকারি অফিসের স্টাফদের অভিযোগ, তার বিরুদ্ধে সরকারি অফিসের কেউ মুখ খুলতেও সাহস পায় না। তার যন্ত্রণায় সরকারি অফিসের অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারীরাই অতিষ্ঠ।

অবশেষে উপজেলার সরকারি দপ্তরের সকল সিসি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তার উপস্থিতির প্রমাণ নিয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিবেন রাজনৈতিক সংগঠন (জামায়াত) এর কেন্দ্রীয় কমিটি সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *