২৬ বছর পূর্তিতে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন

0
42
Advertisement

মো: আতিকুর রহমান:

‘একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন’ এই শ্লোগানকে বুকে ধারণ করে স্বেচ্ছায় রক্তদানকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর মহৎপ্রাণ একদল উদ্যমী, সপ্নবাজ তরুণের হাত ধরে একটি বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচি’র মাধ্যমে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাঁধনের পথচলা শুরু হয়। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সংগঠনটি আজ ২৬ বছর পূর্ণ করেছে।

একজন মুমূর্ষু ও মৃত্যুপথযাত্রীর বেঁচে থাকার প্রয়াসকে বুকে লালন করে এগিয়ে আসছে নির্ভীক বাঁধনকর্মীরা, যারা উপলব্ধি করতে পেরেছে ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’।

পথচলার ২৬ বছরে সংগঠনটি তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবে রুপদানের জন্য একটি অরাজনৈতিক, অসাম্প্রদায়িক ও স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন হিসেবে ৭৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১২ টি জোন, ১৪১ টি ইউনিট ও ৩ টি পরিবারের মাধ্যমে সুষ্ঠু, সুন্দর, সুগম ও সাবলীলভাবে তার কার্যক্রম গুলো পরিচালনা করে আসছে।

স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণ, স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং অন্যান্য সেবা ও সচেতনতামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা সংগঠনটির অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। গত ২৬ বছরে সংগঠনটি বিনামূল্যে প্রায় ১০ লক্ষ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করেছে এবং ২১ লক্ষ মানুষকে তার রক্তের গ্রুপ জানিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, পথশিশু ও দরিদ্রদের মাঝে ঈদ উপহার ও শীত বস্ত্র বিতরণ বাঁধনের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। বাঁধন ট্রান্সফিউশন সেন্টারের মাধ্যমে নিয়মিত রক্তদাতাদের রক্ত সংগ্রহ করে তা অসহায়, দরিদ্র থ্যালাসেমিয়া ও অন্যান্য রুগীদের পৌঁছে দেওয়া এবং করোনা কালীন পরিস্থিতিতে প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে মৃত্যু পথযাত্রীদের বাঁচাতে এগিয়ে আসা বাঁধনের কার্যক্রমকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।

গত বছর সংগঠনটি নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে রজতজয়ন্তী উদযাপন করেন। এই উপলক্ষে সারা দেশে একযোগে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। রজতজয়ন্তীতে শারীরিক ও মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকা, সুবিধাবঞ্চিত ও ছিন্নমূল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত নিবেদিত সকল বাঁধনকর্মীদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘রজতজয়ন্তী মিলনমেলা’ আয়োজন করা হয়। মিলনমেলায় সেরা রক্তদাতাদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়া বাঁধনের কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজেশন করার লক্ষ্যে ‘বাঁধন এপস’ তৈরী করা হয়েছে। যেখানে রুগীরা সহজেই রক্তদাতার সন্ধান করতে পারে।

২৬ বছর পূর্তিতে বাঁধন কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি ফাহিম হোসেন বলেন, বাঁধন একটি সামাজিক আন্দোলনের নাম। এদেশের প্রতিটি মানুষকে সামাজিকভাবে রক্তদানে সচেতন করার মাঝেই রয়েছে আমাদের এই আন্দোলনের সফলতা। ১৯৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর এই মানবিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল, তা হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ ২৬ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। ২৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাঁধন এর সকল সম্মানিত রক্তদাতা, সদস্য, শুভাকাঙ্ক্ষী ও উপদেষ্টামন্ডলীদের জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।২৬ বছর পূর্তিতে আমাদের এবারের স্লোগান ‘ছাব্বিশের স্বপ্নকথা, রক্তদানেই মানবতা’। এই স্লোগান বাঁধনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং রক্তদানের মানবিক দিকগুলোরই বহিঃপ্রকাশ। এখন পর্যন্ত এদেশের ৫৪টি জেলায় আমাদের সংগঠনের বিস্তৃতি রয়েছে, আমাদের পরিকল্পনা খুব কম সময়ের মধ্যে এদেশের ৬৪টি জেলায় আমাদের কর্মকাণ্ডের বিস্তার লাভ করানো। যাতে এদেশের সকল মানুষ আমাদের পরিসেবার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এদেশের প্রতিটি মানুষ নিজেদের রক্তের গ্রুপ জানবে ও সেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসবে এবং রক্তের অভাবে মৃত্যু এক নিছক শব্দে পরিনত হবে, আমরা সেই দিনেরই প্রতিক্ষায়। বাঁধনের মানবিক, উদার ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধে উজ্জীবিত হোক এদেশের সকল মানুষের প্রাণ এবং গড়ে উঠুক সুস্থ-সুন্দর ও মানবিক সমাজ।